কে বসবেন রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়রের চেয়ারে। ভোটের মাধ্যমে সে পরীক্ষা হবে কাল মঙ্গলবার। প্রার্থীদের নিয়ে ভোটারদের মধ্যে চলছে এখন আলোচনা। সকাল থেকে প্রতিটি পাড়া মহল্লার অলিগলিতে দেখা গেছে কর্মীদের শেষদিকের পদচারণা। শেষ পর্যায়ে এসে ভোটাররা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছেন।
সোমবার সকাল থেকে বিভিন্ন কেন্দ্রে ইভিএমসহ নির্বাচনি সরঞ্জাম পৌঁছে দেয়া হয়েছে। নগরীর প্রধান প্রধান পয়েন্টে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। ইভিএমসহ আনুসাঙ্গিক সরঞ্জাম কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানো শুরু করেছেন নির্বাচন কমিশন। পুলিশ লাইন্স মাঠে দুইদিন আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে থাকে নির্বাচনী সরঞ্জাম রাখার। নির্বাচনে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ, আনসার, ভিডিপি এবং নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা প্রিজাইডিং কর্মকর্তা সকালেই মাঠে উপস্থিত হন। পুলিশ লাইন্স মাঠেই বিশেষ ব্রিফিং করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা আব্দুল বাতেন ও রংপুর মেট্রোপুলিশ কমিশনার নুরে আলম মিনাসহ অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরণের দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়। এরপর দুপুর ১২ টার পর থেকে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের প্রত্যক্ষ তত্বাবধায়নে নির্বাচনী সরঞ্জাম বিতরণ শুরু হয়।
নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা আব্দুল বাতেন জানান, দুপুরের মধ্যেই ইভিএমসহ নির্বাচনের আনুষাঙ্গিক সামগ্রী ভোটকেন্দ্রে পাঠানো শুরু করেছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তত্ত্বাবধানে এসব সামগ্রী কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানো হচ্ছে। ভোটকেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তায় থাকবেন পুলিশ ও আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। নির্বাচনে কারও বিরুদ্ধে কোন রকম অভিযোগ উঠলেই সাথে সাথে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে সোমবার দুপুরে সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে বিশেষ ব্রিফিং করেন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার নুরে আলম মিনা। এসময় তিনি বলেন, রংপুর সিটি করপোরেশনের এটি ৩য় বারের নির্বাচন। এর আগে দুটি নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। তৃতীয় বারের নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করতে সকল ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে।
৩৩ টি ওয়ার্ডের ২২৯ কেন্দ্রে মোট ভোট কক্ষের সংখ্যা ১ হাজার ৩৪৯ টি। ভোটার ৪ লাখ ২৬ হাজার ৪৭০ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ২ লাখ ১৪ হাজার ১৬৬ জন, পুরুষ ২ লাখ ১২ হাজার ৩০৩ জন এবং হিজড়া ভোটার রয়েছে ১ জন।
নির্বাচনে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ২২৯ জন এবং সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা থাকবেন এক হাজার ৩৪৯ জন। মোট পোলিং অফিসার থাকবেন ২ হাজার ৬৯৮ জন। রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইভিএমের মাধ্যমে সকাল থেকে সাড়ে ৮ টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪ টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ হবে। ভোট কেন্দ্রগুলো সিসিটিভির আওতায় থাকবে। ৯ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ দেয়ার পরে প্রার্থীরা আনুষ্ঠানিক প্রচারণায় নামেন। মোট ১৬ দিন প্রার্থীরা প্রচারণার সুয়োগ পেয়েছেন। ৯ জন মেয়র, সংরক্ষিত কাউন্সিলর ৬৮ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর ১৮৩ জনসহ মোট ২৬০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রংপুর সিটি করপোরেশনের তৃতীয় দফা নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রার্থীরা এতদিন নির্বাচনি প্রচারণার মাঠ দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। এখন অপেক্ষার পালা। নির্বাচনে মেয়র পদে যারা লড়ছেন তারা হলেন, আওয়ামী লীগের অ্যাড. হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া, জাতীয় পার্টির মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, ইসলামী আন্দোলনের আমিরুজ্জামান পিয়াল, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র লতিফুর রহমান মিলন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী আবু রায়হান, খেলাফত মজলিসের প্রার্থী তৌহিদুর রহমান মন্ডল, জাসদের প্রার্থী শফিয়ার রহমান, জাকের পার্টির প্রার্থী খোরশেদ আলম ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মেহেদী হাসান বনি।
জাপার প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, ভোট নিয়ে আমাদের কোনো শঙ্কা নেই। তবে নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপি করতে আসা যেকোনো অশুভ শক্তিকে প্রতিহত করতে আমরা প্রস্তুত আছি। নির্বাচন কমিশন একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার কমিটমেন্ট করেছে, আমরা সেই নিরিখে আস্থা রেখে নির্বাচন করছি। আমরা মনে করি এই নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে।
আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কার মেয়র প্রার্থী হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া বলেছেন, নৌকার পক্ষে ব্যাপক গণজোয়ার উঠেছে। বিপুল ভোটে নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত। রংপুর যে নৌকার ঘাটি তা প্রমাণ হবে এ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রংপুরবাসীকে বিভাগ, সিটি করপোরেশন, বিশ্ববিদ্যালয়, চার লেন সড়ক উপহার দিয়েছেন। তাই রংপুরবাসীর উচিত এবার নৌকায় ভোট দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিজয় উপহার দেয়া।
ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী আমিরুজ্জামান পিয়ালও বিজয়ের প্রত্যাশায় ভোট করছেন। জনগণের কাছে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে ভোট প্রত্যাশা করছেন। তার পক্ষে দলের আমীর মুফতী রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই সহ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা রংপুরে গণসংযোগ করেছে।
বিগত ২০১৭ সালের নির্বাচনে নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা এক লাখের বেশি ভোটের ব্যাবধানে নৌকা মার্কার প্রার্থী প্রয়াত সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টুকে হারিয়ে মেয়র হয়েছিলেন। এর আগে ২০১২ সালের নির্বাচনে সরফুদ্দিন আহমেদ স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করা বর্তমান জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে হারিয়ে প্রথম মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন।