দেশের প্রায় সকল রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে মতবিনিময় সভা করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। শনিবার সকালে রাজধানীর ইম্পেরিয়াল কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত এ সভায় আওয়ামীলীগ ব্যতিত দেশের প্রায় সকল রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট উত্তরণ এবং একটি সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচনের লক্ষে করণীয় শীর্ষক মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম (পীর সাহেব চরমোনাই)।
মতবিনিময় সভায় অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ ভুলু, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর ইব্রাহিম বীর প্রতীক, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. আবদুল লতিফ মাসুম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা আহমাদ আব্দুল কাদের, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম মসীহ, এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আতিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ ফরায়েজী আন্দোলনের সভাপতি ও বাহাদুরপুর দরবারের পীর মাওলানা আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ হাসান, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, মোকামিয়া দরবারের পীর মাওলানা মাহমুদুল হাসান ফেরদৌস-সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
সভায় এছাড়াও আরো বক্তব্য রাখেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই, মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, আল্লামা নূরুল হুদা ফয়েজী, অধ্যাপক আশরাফ আলী আকনসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম তাঁর বক্তব্যে বলেন, “স্বাধীনতার পর ৪ পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থার মাধ্যমে জাতীয় সংসদসহ বিভিন্ন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা দেখতে পাই দলীয় সরকার, সামরিক সরকার, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও সেনাসমর্থিত সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনই নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হয়নি।”
পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, “বর্তমানে রাজনৈতিক প্রেক্ষিতে এবং বিগত নির্বাচন পদ্ধতিরগুলোর ত্রুটির কারণে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য নিবন্ধিত সকল দলের পরামর্শক্রমে এবং অংশগ্রহণে জাতীয় সরকার গঠন করে তার অধীনে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে নির্বাচনটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং সকল দলের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে বলে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনে করে।”
এসময় তিনি জাতীয় সরকারের রূপরেখা প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। জাতীয় সরকারের রূপরেখা প্রস্তাবনা ৯টি পয়েন্টে আনেন তিনি।
১. আপিল বিভাগের একজন বিজ্ঞ, সৎ, যোগ্য ও গ্রহণযোগ্য বিচারপতিকে প্রধান করে নিবন্ধিত দলগুলোর প্রতিনিধিদের নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন হবে।
২. যারা জাতীয় সরকারে থাকবেন তারা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।
৩. জাতীয় সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে।
৪. জাতীয় সরকার গঠিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বর্তমান জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দিতে হবে।
৫. সংসদ ভেঙ্গে দেয়ার পাশাপাশি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন।
৬. জাতীয় সরকার গঠিত হওয়ার পরবর্তী ৩ মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করবেন। কোনো কারণে তা সম্ভব না হলে পরবর্তী ৩ মাসের মধ্যে অবশ্যই নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।
৭. জাতীয় সরকার গঠিত হওয়ার পর নির্বাচন কমিশন ভেঙ্গে দিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে।
৮. বর্তমান মন্ত্রীসভার কেউই নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকারে থাকতে পারবেন না।
৯. সকল দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জাতীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে নির্বাচনটি সকল দলের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।