ইউক্রেনের বিরুদ্ধে গত ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইউক্রেনিয়ান প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এই প্রথম কোন বিদেশ সফরে যুক্তরাষ্ট্রের পথে রয়েছেন। সেখানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এক টুইটে জানিয়েছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসেও বক্তৃতা দেবেন। তিনি আশা করছেন, এই সফরের মাধ্যমে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা আরও শক্তিশালী হবে।
এর আগে হোয়াইট হাউজ জানিয়েছিল, এই সফরের সময় ইউক্রেনকে নিরাপত্তা সহযোগিতা দেয়ার জন্য একটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ নতুন পরিকল্পনা ঘোষণা করবেন দুই দেশের নেতৃবৃন্দ। একজন মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, এর মধ্যে ইউক্রেনকে অত্যাধুনিক প্যাট্রিয়ট বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র দেয়ার কথাও রয়েছে।
প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি কখন এবং কিভাবে যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ করছেন, সেটি প্রকাশ করা হচ্ছে না তার নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে। সফর শুরু হওয়ার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে এর কথা ঘোষণা করা হয়।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে ইউক্রেনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র। যুক্তরাষ্ট্র এ পর্যন্ত ইউক্রেনকে ৫ হাজার কোটি ডলারের মানবিক, আর্থিক এবং নিরাপত্তা সহায়তা দিয়েছে। বিশ্বের অন্য যে কোন দেশের তুলনায় এটি অনেক বেশি।
যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি পশ্চিমা নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছেন। তবে তাকে হোয়াইট হাউজে অতিথি হিসেবে স্বাগত জানিয়ে প্রেসিডেন্ট বাইডেন এরকম একটা ইঙ্গিত দিতে চান যে, এই যুদ্ধে যত সময়ই লাগুক, ওয়াশিংটন ইউক্রেনকে সমর্থন যুগিয়ে যেতে অঙ্গীকারবদ্ধ।
রাশিয়া বলেছে, এই সফরের ফলে “সংঘাত আরও খারাপ দিকে মোড় নেবে।”
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, “ইউক্রেনের জন্য এটি ভালো কিছুর লক্ষণ বলে মনে হচ্ছে না।”
প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সফর শুরু হওয়ার আগে হোয়াইট হাউজের এক ব্রিফিং এ ইউক্রেনের জন্য দুইশো কোটি ডলারের এক নতুন নিরাপত্তা সহায়তার ঘোষণা দেয়া হয়।
এই পরিকল্পনার আওতায় ইউক্রেনকে অত্যাধুনিক প্যাট্রিয়ট মিসাইল ব্যাটারি দেয়া হবে। এটি খুবই অত্যাধুনিক এক বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে ইউক্রেনের শহরগুলোকে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।
রাশিয়ার এসব হামলাকে কর্মকর্তারা ইউক্রেনের মনোবল ভেঙে দেয়ার চেষ্টা বলে বর্ণনা করেন। এসব হামলার ফলে তীব্র শীতের মৌসুমে ইউক্রেনের লাখ লাখ মানুষের বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই, ঘর গরম করার কোন ব্যবস্থা নেই।
প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়তে তার দেশকে দূর পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দেয়ার জন্য অনেক দিন ধরেই দাবি জানাচ্ছেন। কিন্তু এরকম অস্ত্র তিনি পাবেন বলে মনে হয় না।
কংগ্রেসে ভাষণ দেয়ার সময় তিনি হয়তো তার দেশের অবকাঠামোর ওপর রাশিয়ার হামলার কথা উল্লেখ করে আরও অস্ত্র চাইবেন।
কংগ্রেসের অনেক রিপাবলিকান সদস্য অবশ্য এভাবে উদার হাতে ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দিয়ে যাওয়ার বিপক্ষে।
প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে মাত্র গতকালই ইউক্রেনের বাখমুট শহরে দেখা গিয়েছিল যুদ্ধের পোশাকে। গত কদিন ধরে এই শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তীব্র লড়াই চলছে। সেখানে তিনি সৈনিকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং তাদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন। সৈনিকরা মি. জেলেনস্কিকে তাদের সই করা একটি ইউক্রেনীয় পতাকা দিয়ে এটি প্রেসিডেন্ট বাইডেন এবং মার্কিন কংগ্রেসকে দিতে বলেন।
এদিকে ক্রেমলিন বলেছে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বুধবার এক গুরুত্বপূর্ণ ভাষণে ২০২৩ সালের জন্য রাশিয়ার সামরিক লক্ষ্য ঘোষণা করবেন।
এ বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়া অভিযান শুরু করার পর অন্তত এক লাখ রুশ সেনা এবং এক লাখ ইউক্রেনীয় সেনা লড়াইয়ে নিহত হয়েছে বলে মার্কিন সামরিক বাহিনীর ধারণা।
এছাড়া আরও ৪০ হাজার বেসামরিক মানুষ এতে নিহত হয়েছে।
নিউজ : বিবিসি বাংলা