নিজস্ব প্রতিবেদক, ইনোটাইমস
বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলনের মেয়রপ্রার্থী মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীমসহ নেতাকর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ, সিইসি’র পদত্যাগ এবং জাতীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে রবিবার দুপুর ১২ টায় ইসলামী আন্দোলনের পুরানা পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন ডাকেন দলের আমীর।
ইসলামী আন্দোলনের আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম (পীর সাহেব চরমোনাই) গণমাধ্যমের সামনে লিখিত বক্তব্য পেশ করেন। এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আর মাদানী, আল্লামা নূরুল হুদা ফয়েজী, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমানসহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম (পীর সাহেব চরমোনাই) বলেন, সরকারদলীয় সন্ত্রাসীরা কতটা নির্মম ও পৈশাচিকভাবে বাংলাদেশের একজন জননন্দিত আলেম ও বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়জুল করীমকে দফায়-দফায় আক্রমন করেছে, চরমভাবে আপমান অপদস্ত করেছে এমনকি শারীরিকভাবে আক্রমন করে রক্তাক্ত করেছে, তা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়।
তিনি বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার জনাব হাবিবুল আউয়াল একজন অবিবেচক উন্মাদের মতো মুফতি ফয়জুল করীমের শরীর থেকে রক্তক্ষরন নিয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য ও উপহাস করেছেন। তিনি সাংবাদিকদেরকে পাল্টা প্রশ্ন করেছেন,‘তিনি (মুফতি ফয়জুল করীম) কি ইন্তেকাল করেছেন?’ একজন মানুষ কোন পর্যায়ের বিবেক বর্জিত হলে দেশের একজন সম্মানিত ব্যক্তির ব্যাপারে এজাতীয় বক্তব্য পেশ করতে পারেন, তা আমাদের ভাবতেও অবাক লাগে। আমরা অবিলম্বে প্রধান নির্বাচন কমিশনার জনাব হাবিবুল আউয়ালের পদত্যাগ চাই। তিনি পদত্যাগ করতে না চাইলে সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় দ্রুত তাঁর অপসারন চাই।
সংবাদ সম্মেলনে আগামী দিনে দেশে শান্তি বজায় রাখার জন্যে এবং শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতা বদলের লক্ষ্যে প্রস্তাবনা তুলে ধরেন মুফতি রেজাউল করীম। প্রস্তাবনাগুলো হলো-
১. জাতীয় সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে।
২. জাতীয় সরকার গঠিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বর্তমান জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দিতে হবে।
৩. সংসদ ভেঙ্গে দেয়ার পাশাপাশি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন।
৪. জাতীয় সরকার গঠিত হওয়ার পরবর্তী ৩ মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করবেন। কোনো কারণে তা সম্ভব না হলে পরবর্তী ৩ মাসের মধ্যে অবশ্যই নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।
৫. বর্তমান মন্ত্রীসভার কেউ’ই নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকারে থাকতে পারবেন না এবং জাতীয় সরকারে যারা থাকবেন তারা জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না।
এছাড়া নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকারে কারা থাকবেন সে ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় আন্দোলনরত রাজনৈতিক দল, দেশপ্রেমিক বুদ্ধিজীবী মহল এবং সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধিগণের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুতই আমরা জাতীয় সরকারে কারা থাকবেন এবং সরকার কাঠামো কি হবে তা প্রকাশ করবো, ইনশাআল্লাহ’।
সংবাদ সম্মেল থেকে ৮ দফা দাবী এবং ২ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
দাবীসমূহ–
১. যেকোন মূল্যে দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি রোধ করতে হবে। বাজার কারসাজীর সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে হবে। লোডশেডিং-এর অসহনীয় যন্ত্রনা থেকে জাতীকে মুক্তি দিতে হবে।
২. অবিলম্বে বিনা বিচারে দীর্ঘদিন ধরে কারাবন্দী সকল মজলুম আলেম এবং রাজবন্দিদের মুক্তি দিতে হবে।
৩. রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, জাতীয় সংহতি ও কার্যকর সংসদ প্রতিষ্ঠায় জাতীয় নির্বাচনে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির (P.R) নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে।
৪. বরিশালে মুফতি ফয়জুল করীমের উপর আক্রমনকারী এবং তাঁকে অপমান অপদস্তকারী সন্ত্রাসী এবং ভোট ডাকাত ও দস্যুদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। এমন অসভ্য ঘটনার পেছনে যারা রয়েছে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে তাদের চিহ্নিত করতে হবে।
৫. গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে প্রণীত বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করতে হবে।
৬. সকল রাজনৈতিক দলের জন্যে সভা-সমাবেশসহ সংবিধান স্বীকৃত সকল রাজনৈতিক কর্মসূচী ও বাকস্বাধীনতা উন্মুক্ত করতে হবে।
৭. সরকারের নির্বাহী আদেশে বন্ধ সকল টিভি চ্যানেল ও সংবাদপত্র অবিলম্বে চালু করতে হবে।
৮. সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম, সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডসহ সকল সাংবাদিক হত্যার দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
কর্মসূচী-
১. ২১ জুন বুধবার, সকাল ১০টায় প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ ও ব্যর্থ নির্বাচন কমিশন বাতিলের দাবীতে নির্বাচন কমিশন কার্যালয় অভিমূখী গণমিছিল।
২. ২৪ জুন শনিবার, সকাল ১০ টায় বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট উত্তরন ও একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচনের লক্ষ্যে করণীয় বিষয়ে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি এবং দেশের শীর্ষ ওলামা মাশায়েখ, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময়।